দিনকেদিন ব্যাংকিং পেশা চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে। ব্যাংকিং পেশায় আগের সেই সম্মান আর নেই। ভালো ভালো ব্যাংকের ম্যানেজার এসি রুম ফেলে কোটিপতি মুদি দোকানদের পাশে বসে গল্প করে ডিপোজিট নিয়ে আসে।
ব্যাংকে চাকরি নিয়ে অনেকেরই নেগেটিভ অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষ করে যারা প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে আছে, তাদের প্রায় সবাই একটা সময় হতাশ না হলেও খুব বিরক্ত হয়ে যায়।
সরকারি ব্যাংকগুলোরও আগের দিন নাই। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি আর বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই সরকারি ব্যাংকগুলো আরো কঠোর হচ্ছে, কাজের প্রেসার বাড়াচ্ছে।
ব্যাংকের চাকরির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সুদ। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ধর্মমুখী। বয়স যত বাড়ে, ধর্মের প্রতি টানও তত বাড়ে। ঠিক এই জায়গাতেই ব্যাংক মানুষকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করে ফেলে। কারণ, জীবনের এই সময়টাতে চাইলেই জব ছাড়া যায় না। আবার, মনও টেবিলে বসে না।
ব্যাংকে জব চ্যালেঞ্জিং কেন |
ব্যাংক জবটা দিনে দিনে টার্গেট বেজড হয়ে যাচ্ছে। সামনে টার্গেট পূরণের উপরই ব্যাংকারদের প্রমোশন, বোনাস অনেক কিছু নির্ভর করবে। আর এই টার্গেট যে কি পরিমাণ যন্ত্রণা!
ভালো মানর প্রাইভেট ব্যাংকে প্রমোশন নির্ভর করে টার্গেট পূরনের উপর। এক ব্যাংকার আরেক ব্যাংকারকে দেখলে জিজ্ঞেস করে, আপনার ব্যাবসাপাতি কেমন চলছে?
কারন, ব্যাংকে প্রত্যেকের আলাদাভাবে টার্গেট সেটাপ। শুনতে খারাপ দেখালেও ব্যাংকের প্রতিটি ডেক্স একটা একটা মুদি দোকানের মতো! আপনি একাউন্ট খুলতে গেলে কে আগে আপনার একাউন্ট খুলবে এটা নিয়ে একজনের সাথে আরেকজনের তর্ক হতেও দেখবেন।
যে ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার যত বেশি ফিল্ডে সময় দিবে,সেই ব্রাঞ্চ তত ভালো ডিপোজিট গ্রোথ করবে,এটাই আজকের দিনের বাস্তব সত্য। আর যে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ব্রাঞ্চের এসির হাওয়া খাবে,তার ব্রাঞ্চে ততটা উন্নত করতে পারবেনা।
আজকের দিনের ব্যাংকিং পেশাটা পুরোপুরি সেলস জব হয়ে গিয়েছে। কারন ভালোমানের ব্যাংকগুলোয় দারোয়ান বাদে সবার টার্গেট সেটাপ করা থাকে। এই টার্গেটের উপর তার প্রমোশন,ইনক্রিমেন্ট সবকিছু হয়।
সরকারি ব্যাংকিং জবে টার্গেট ততটা চাপ থাকেনা। এইজন্যই আমাদের দেশে লক্ষ করলে দেখবেন সরকারি ব্যাংকগুলোর বেহাল দশা। তার অন্যতম একমাত্র কারন প্রাইভেট ব্যাংকের মতো সরকারি ব্যাংকে কর্মীদের টার্গেট দেয়া নেই। যা টার্গেট আছে,সেগুলো নামমাত্র।
সরকারি ব্যাংকেও যদি টার্গেটের প্রেশার থাকতো তবে এদেশে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আজকের দিনে বেহাল অবস্থা হতো না।
এখন আগের মতো প্রাইভেট ব্যাংকে ম্যানেজারকে তেলমেরেও প্রমোশন নেয়া যায়না। সবকিছু নির্ভর করে বছর শেষে একজন ব্যাংকার কত টাকা ডিপোজিট গ্রোথ করলো,কত টাকা লোন দিলো,কয়টা ক্রেডিট কার্ড সেল করলো, সেটার উপর।
এমনকি ম্যানেজারের প্রমোশন নির্ভর করে ব্রাঞ্চে কত টাকা ডিপোজিট গ্রোথ হলো সেটার উপর। অন্যদিকে ব্রাঞ্চে কাস্টমারদের সার্ভিস দিতে হয়। সার্ভিস ফেলে তো অফিসাররা রাস্তায় ঘুরতে পারবেনা। তাই ম্যানেজার নিজেই ব্যাংকি টাইমে সুযোগ পেলেই বাহিরে বড় বড় রাঘববোয়ালদের কাছে ফান্ডের সন্ধানে বের হতে হয়।
এছাড়া প্রায় ভালো মানের সব ব্যাংকেই থার্ড পার্টি কন্ট্রাকচুয়াল সেলসের এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দিচ্ছে। কেউ লোনে কাজ করছে,কেউবা আবার ডিপোজিট নিয়ে। ব্যাংকার আর একজন সেলসম্যানের কাজের মধ্যে এখন আর তেমন বড় একটা তফাত নেই।
কোন পেশাকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।
বাংলাদেশে দ্রুত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সেলস জব বেস্ট চয়েজ হতে পারে। এই নিয়ে আমাদের JobsQnA সাইটে অন্য আরেকটা আর্টিকেল লিখব।
ব্যাংকিং জবে আরেকটা সমস্যা হল তেলবাজি। যার টাকা আছে, ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে তোয়াজ করে। আর তারাও সময় সুযোগ মত ব্যাংকারদের নাকে রশি দিয়ে ঘুরায়।
ব্যাংক জবের অনেক সুবিধা আছে। হাজারো সুবিধার ভিড়ে আবার কিছু অসুবিধাও আছে। দুইটা অসুবিধার কথা বললাম। এইগুলো আমার নিজের দেখা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল ব্যাংক জবটাই একটা মাকাল ফল।
আমি কাউকে আশাহত করার জন্য বলছি না। বলছি না, ব্যাংকে জব করা যাবে না। বাট যদি সুযোগ থাকে,ভালো মানের অন্য কোন বেসরকারি বা সরকার জবে চেস্টা করুন।
আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক, লক্ষ করে দেখবেন ২৫-৩০ হাজার টাকা বেতনে কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মারশিয়াল অফিসার যতটা সচ্ছলতার সাথে পরিবার চালাচ্ছে,আপনি ব্যাংকিং জবের প্রাপ্ত ৪০-৫০ হাজার সেলারি দিয়ে সেইভাবে সচ্ছলতার সাথে ফ্যামিলি চালাতে পারছেন না। কারন এই জবের সেলারিতে বরকত নেই।
কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মামাখালু ছাড়া হচ্ছেনা। নিয়োগ নিয়ে ছলছাতুরি। সবকিছু মিলিয়েই মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে এই পেশায় আসছে।
Tags
Private Bank