BCS কেন কমার্সের স্টুডেন্টদের জন্য নয়?

আপনি সরকারি যত ফার্স্ট ক্লাস পর্যায়ের চাকরি দেখবেন (বিসিএস/ব্যাংক), সেখানে বেশির ভাগই সায়েন্সের স্টুডেন্ট, কমার্সের স্টুডেন্ট নাই বললে চলে।  কিন্তু কেন?  

কারণটা হল - আপনি Commerce এর যেসব বিষয় গুলো পড়েন, একটা বিষয়ের একলাইন বাক্যও কোনো সরকারি পরিক্ষায় পাবেন না৷ আপনি ক্লাস ৯-১২ পর্যন্ত ৫ বছর পড়লেন, BBA & MBA করলে ৭/৮ বছর অর্থাৎ টোটাল ১৪/১৫ যা পড়লেন, যা গবেষণা করলেন এতে সরকারের কিছু যায় আসে না। 

সরকারি পরিক্ষা গুলোতে সায়েন্সের স্টুডেন্টরা এগিয়ে থাকে বেশি। কারণ প্রতিটা সরকারি পরিক্ষায় দুইটা বিষয় থাকবে সেটাতে আপনি তাদেরকে থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে থাকবেন। বিষয় গুলো হলো - গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান৷ আপনি সাধারণ গণিত ও বিজ্ঞান পড়েছেন SSC পর্যন্ত। কিন্তু HSC, BBA, MBA পর্যন্ত এই বিষয় গুলো পড়েন নাই, মানে আপনি ৯/১০ বছর এইসব বিষয় থেকে দূরে ছিলেন । কিন্তু সাইয়েন্সের কাকুরা তো আর দূরে থাকে না। তারা গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান পড়তে থাকে ও পড়াতে থাকে ( টিউশন ও কোচিং সেন্টারে)। ফলে তারা যেটা ১০ বছর ধরে চর্চা করছে৷ আর আপনি কমার্সের স্টুডেন্ট হয়ে ১০বছর পরে সরকারি চাকরিতে পরিক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন কিন্তু আপনি গণিত ও বিজ্ঞান রিভাইজ করতে হিমসিম খেয়ে যাবেন ও তাদের সাথে কম্পিটিটিপ পরিক্ষায় তাদের সাথে পারবেন না৷ 
BCS কেন কমার্সের স্টুডেন্টদের জন্য নয়
BCS কেন কমার্সের স্টুডেন্টদের জন্য নয়
একজন সাইয়েন্সের স্টুডেন্ট যদি মেডিকেলে চান্স না পাই, তাহলে সে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পরিক্ষায় দিবে তার জন্য এলাদা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির ব্যবস্থা থাকবে যেমন ঢাকা মেডিকেল, চট্টগ্রাম মেডিকেল, বুয়েট, কুয়েট চুয়েট ইত্যাদি ইত্যাদি। 
আবার তারা যদি এইখানে কোনো চান্স না পাই তাহলে কাকুদের জন্য এলাদা এলাদা অনেক অনেক বিষয় নিয়ে পাবলিক ইউনিভার্সিটি পড়ার সুযোগ থাকবে৷ আবার যদি কাকুরা এইখানেও চান্স না পাই তাহলে কাকুরা কমার্স ও আর্টসের বিষয় নিয়ে পড়তে পারবে৷ আচ্ছা আবার যদি এইখানে চান্স না পাই তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেকোনো বিষয় নিয়ে অনার্স করতে পারবে৷ কিন্তু কমার্সের স্টুডেন্টরা তেমন সুযোগ পায় না৷ এই দেখুন Dhaka University তে কমার্সের স্টুডেন্টদের জন্য সিট আছে ১২০০ 😃। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০ টা 😁। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদেই দিলাম৷ 

ঠিক তেমনি সায়েইন্সের কাকু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরেও বিসিএস ক্যাডার হবে। তার মানে কী - কমার্সের স্টুডেন্টরা মূর্খ তাদের চেয়ে?  না, আপনি বিসিএস এ লড়াই করতে পারবে না, কারণ আপনি ১০ বছর Accounting, Management, Finance এইসব পড়েছেন, আপনি ম্যাথ, বিজ্ঞান, কম্পিউটারে তেমন কোন নলেজ নাই। বিপরীতে সাইয়েন্সের কাকুদের এইসব বিষয় চর্চার মধ্যে থাকে। ফলে ওনারা শুরুতেও হাসে,  শেষ সময়েও হাসে। 

ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তাররা বিসিএস ক্যাডার হবে কি,হবে না - সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এইটার বিরুদ্ধে আমি নই। আমার বিরোধিতাও BPSC'এর কিছু যায় আসে না৷ 

শুধু কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ভাই-বোনদের কাছে বিনীত নিবেদন থাকবে, আপনারা একাডেমিক স্টাডির পাশাপাশি "ইংরেজি, ম্যাথ কম্পিউটার স্কিল" অবশ্যই চর্চার মধ্যে রাখবেন৷ যত দ্রুত পারেন তত দ্রুত সরকারি চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, কারণ সরকার আপনাকে মাত্র ৩০ বছর পর্যন্ত সুযোগ দিবে পরিক্ষা দেওয়ার। এই দেশে কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদের দরকার কাছে, কারণ তারা যা পারে ও বুজে তা অন্যদের দিয়ে সম্ভব নয়। ৪০তম বিসিএস এ শিক্ষা ক্যাডারে ৭০%+ প্রার্থী সায়েন্সের৷ চাইলে এই জায়গাটা কমার্সের স্টুডেন্টরা নিতে পারত৷ 

এমনকি কমার্সের স্টুডেন্টরা যদি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যায়,সেখানেও তাদের আসন সংখ্যা খুবই নগন্য। আমাদের বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে কমার্সের স্টুডেন্ট বাড়তে থাকে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে কমার্সে পড়া ছাত্রছাত্রী বহুগুণ বাড়তে থাকে। তারপর চাকরির বাজারে এসে কমার্সের ছাত্রছাত্রীরা হোচট খেতে থাকে। তারপর থেকে কমার্সে পড়া ছাত্রছাত্রী কমা শুরু করে। 
সাম্প্রতি স্কুল কলেজের জড়িপে দেখা যাচ্ছে নবম শ্রেণিতে কমার্সে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আগের তুলনায় বহুগুণ কমছে।

এছাড়া কমার্স রিলেটেড যে জব রয়েছে সেগুলোর সেলারি খুবই কম। কমার্সে পড়ে সিএ,এসিএ না করতে পারলে জব মার্কেটে কোন ভ্যালু নাই। কমার্সে বিবিএ এমবিএ করে ১২-১৫ হাজার সেলারিতে জব ম্যানেজ করা কস্টকর হয়ে যায়। ফলে ছাত্রছাত্রীরা এখন Commerce না পড়ে, Arts নিয়ে পড়ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন