বর্তমান যুগে একটি জব ম্যানেজ করার চেয়ে একটি ভালো টিউশনি ম্যানেজ করা কম কষ্টদায়ক নয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেকোন কাজে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা টিউটর আছেন,তাদের কাজেও আছে সমান প্রতিযোগিতা।
অর্থনীতিতে চাহিদা ও যোগান বলে একটা ট্রাম আছে। দিনকে-দিন শুধুমাত্র যে টিউটরদের ভ্যালু কমছে,সেটা কিন্তু নয়। আপনি যখন পড়ালেখা শেষ করে,চাকরির বাজারে যাবেন, তখন আপনার কাছে মনে হবে সপ্তাহে ছয়দিন, দুইহাজার টাকার সম্মানির টিউশন কতটা আশির্বাদ।
আমাদের এদেশে হাজার হাজার মাস্টার্স পাশ ছেলেমেয়ে ১২-১৫ হাজার টাকার সেলারিতে দিন ১২ ঘন্টা পরিশ্রম করছে। সেখানে আপনি ১২ ঘন্টা টিউশন করালে, খুব কম হলে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন অনায়াসে। অনেকে বলে টিউশনিতে স্বাধীনতা নেই। বাস্তবতা হলো, টিউশনির মতো স্বাধীন কাজ দ্বিতীয়টি নেই। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি।
টিউশনি কি ক্যারিয়ার হতে পারে |
ভবিষ্যতে চাকরির বাজার আরো খারাপ হবে। বেসরকারি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর পলিসি হলো, পনেরো বিশ হাজার সেলারিতে দুই তিনজনের HRM টিম বানাবে। তারপর যত অল্প বেতনে সম্ভব কর্মী নিয়োগ দিবে। যে কর্মী চাকরিতে জয়েনের প্রথমদিন থেকেই চিন্তা করবে,ভালো বেতনে অন্য কোথাও সুযোগ পেলে চলে যাবে। তারপর সেই কর্মী তিন চারমাস পর চলে যাবে, তখন HRM আবারো কর্মী খুঁজবে। এইভাবে চলমান থাকবে.......
আপনি শুনলে অবাক হবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এমবিএ করা গ্রেজুয়েট মাত্র ১৫ হাজার সেলারির জব পেয়েও আত্বতৃপ্তিতে ভোগে। এই যুগে পনেরো হাজার টাকায় কি হয়!?
কিন্তু আপনি ভালো টিউশন করিয়ে পরিচিতি লাভ করতে পারলে একটা পর্যায়ে এসে টিউশন করিয়ে মাসে ২৫-৩০ হাজার আয় করা কোন ব্যাপার না।
আমাদের সমস্যা হলো আমরা অনার্স পাশের পর টিউশনিতে মন দিতে পারিনা। বিসিএস প্রস্তুতি, ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা,নানান চাপে টিউশন কমিয়ে দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দিই।
যাদের ফ্যামিলি বেকাপ ভালো তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। কিন্তু যাদের ফ্যামিলি বেকাপ ভালো না তাদের অন্তত জব না হওয়া পর্যন্ত টিউশনিতে গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো উচিত।
আজকে আমার এই আর্টিকেলের মর্মার্থ হলো, আমরা সবাই কমবেশি টিউশনির সম্মানি নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকি। বাস্তবতা হলো, এটার জন্য আমরা কেউ দায়ী নই। সমাজে শিক্ষিত ব্যাক্তির সংখ্যা বাড়ছে। আগে একসময় শোনা যেতো, কেউ কেউ টিউশন করিয়ে বাড়ি-গাড়ি করেছে। এখন সেইগুলা শোনা যায়না। কারন, আপনারা বুঝতেই পারছেন। তবে আজকে সবার জন্য আমার একটা পরামর্শ থাকবে, চাকরি পাবার আশায় কখনোই টিউশনি ছাড়বেন না। চাকরির আগ পর্যন্ত সম্ভব হলে টিউশন বাড়াবেন। চাকরি কনফার্ম হলে,তারপর টিউশন ছাড়বেন।
এখন এক ভাইয়ের ফেসবুক পোস্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরবোঃ
টিউশন নিয়ে অনেকের অনেক রকম অভিজ্ঞতা শুনেছি। বেশিরভাগই বলেন অতিরিক্ত টিউশন পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। আমার অভিজ্ঞতা কিছুটা আলাদা।
আমি স্টুডেন্ট লাইফে টিউশন কে ফুলটাইম জব হিসাবে গ্রহণ করি। এটা অনেকের কাছে বোকামো মনে হতে পারে, কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি আমার জন্য আলহামদুলিল্লাহ ফুলটাইম টিউশন ঠিক ডিসিশন ছিল।
SSC ও HSC তে GPA-5 থাকলেও ছাত্র হিসাবে আমি চরম ফাঁকিবাজ ছিলাম। রুটিন করে টানা আমার দ্বারা পড়া সম্ভব হতো না। কতবার রুটিন করেছি ইন্সপায়ারড হয়েছি কিন্তু সব সাময়িক। কিছু দিন পর যা তাই। এই মেন্টালিটির জন্য এডমিশনের ধরা খেয়েছিলাম এবং ফলাফল, ন্যাশনালে তুলনামূলক দুর্বল কলেজের ইংরেজি বিভাগের ভর্তি হয়েছিলাম।
ন্যাশনালে পড়া অবস্থায় দেখলাম সবাই চাকরি পরীক্ষার প্রিপারেশন পুরোদমে লেগে আছে। আমিও দেখাদেখি চেষ্টা করলাম কিন্তু ঠিক পূর্বের মতোই অবস্থা হলো, সমস্ত সরকারি জবের প্রিপারেশন এর স্বপ্ন কর্পূরের মত উড়ে গেল কিছুদিন যেতে না যেতেই।
এবার আমার মনে হলো সম্ভবত আমার জন্য এই পথ নয়।তাই খোজা শুরু করলাম-
“আমি আসলে কি করতে ভালোবাসি?” দেখলাম আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে একমাত্র প্রোডাক্টিভ কাজ হলো, আমি পড়াতে ভালোবাসি এবং স্টুডেন্ট ও গার্ডিয়ানের মেন্টালিটি বুঝি (ডেল কার্নেগীর বই পড়া হয়েছিল)।
আর দেরি না করে টিউশনির বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। নিজের মধ্যে পরিবর্তন বুঝতে পারলাম। পরিবর্তনটা হল আগেও একাডেমিক পড়া হত না এখনো তেমন একটা হয় না কিন্তু বড় অংকের একটা আর্নিং আসে এবং টিউশন রিলেটেড পড়াশোনায় আমার প্রচুর আগ্রহ। বলাই হয়নি আমি বগুড়াতে টিউশন করাতাম। আর 2015 সালের দিকে আমি টিউশন করিয়ে 16000 প্লাস-মাইনাস উপার্জন করতাম। ইংরেজি সাহিত্যের ন্যাশনাল এর স্টুডেন্ট হিসাবে আমাদের সবার একটা কমন দুর্বলতা আছে। সেটা হচ্ছে স্পোকেন ফ্লুয়েন্সি এবং স্ট্যান্ডার্ড প্রোনানসিয়েশন দুর্বলতা। আর বেসরকারি সেক্টরে এই দুইটা অন্যতম জরুরী দুইটা স্কিল।
সবাই যখন বিসিএস আর গ্রামার পড়তো আমি তখন অনর্গল ইউটিউবে ইংলিশ লেকচার শুনতাম। প্রেসেন্টেশন স্কিল খেয়াল করতাম।
Tags
Career QnA