অনার্স পাশ করেও চাকরি পায়না কেন?

স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেও একজন চাকরি পায় না কেন? এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনে। যারা অনার্স পাশ করে বেকার বসে আছেন তাদের জন্য আমার আজকের আর্টিকেল গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করা একজন শিক্ষার্থী যখন জব করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা এবং সারাজীবনের অর্জিত সব সার্টিফিকেট ও আবশ্যকীয় কাগজ পত্রাদি নিয়ে জব সার্কুলার পড়তে শুরু করে তখন ওই শিক্ষার্থী দেখতে পায় যে বিজ্ঞপ্তির প্রায় ৯৯% জবের জন্য সে শিক্ষাগত যোগ্যতা তার অতীত জীবনের ২৪ বা ২৫ বছরে যা অর্জন করেছে,তার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।

কোনো এক শর্তের জন্য সে ৯৯% জব সেক্টরের মধ্যে ২% জায়গায়ও জবের জন্য আবেদন করতে পারে না। কথা টা অদ্ভুত হলেও ১০০% সত্য। 
অনার্স পাশ করেও চাকরি পায়না কেন
অনার্স পাশ করেও চাকরি পায়না কেন
আর সেই জায়গায়টা হলো 'বাস্তব অভিজ্ঞতা'র কথা টা। জব প্রদানকারী সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাই বিজ্ঞপ্তিতে বলে রেখেছে যে ২,৫,৮ বা ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীরাই শুধু আবেদন করবেন। অভিজ্ঞতার কাছে হেরে যান অনার্স মাস্টার্স পাশকরা যুবক-যুবতীরা।

কিন্তু এই জব প্রদানকারী অযোগ্য, অনভিজ্ঞ ও মূর্খ কর্তৃপক্ষ, আপনারা কী একবারও ভেবে দেখেছেন ২৪ বা ২৫ বছর বৃদ্ধ মা বাবার হোটেলে থেকে সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীগুলো ২,৫ বা ১০ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে?

পাস করা শিক্ষার্থীদেরকে আপনারা কাজ কারবার সুযোগ না দিয়েই যদি তাদের অভিজ্ঞতা খোঁজেন তাহলে তারা অভিজ্ঞতা কোথায় থেকে অর্জন করবে? 
এটা কী শিক্ষার্থীরা মাটিতে কুড়িয়ে পাবে নাকি আকাশ থেকে উড়ে এসে তাদের কাগজ পত্রাদির ফাইলে প্রবেশ করবে? 

আপনাদের তো লজ্জা থাকা উচিত ছিলো। আপনাদের নিজেরই তো কোনো অভিজ্ঞতা নাই। তাহলে নবীনদের নিয়োগ দেবার সময় তাদের কাজের অভিজ্ঞতা খোঁজেন কেনো?
এটাতো একটা কমন সেন্সের ব্যাপার যে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী পূর্ব অভিজ্ঞতা কোথায় পাবে? 

টানা ১৭ বা ১৮ বছর লেখা পড়া করার পরও যদি আপনাদের প্রতিষ্ঠানে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের কাজ করার যোগ্যতা নাই বলে যদি আপনাদের মনে হয় তাহলে আপনারা দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিচ্ছেন না কেনো? সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যে যে অভিজ্ঞতা লাগবে সেগুলোর শিক্ষা দিচ্ছেন না কোনো? অথবা দেশে প্রচলিত ধ্বংসাত্মক শিক্ষা ব্যবসার পাশাপাশি আপনাদের ভাষায় 'জব পাবার অভিজ্ঞতার শিক্ষা ' দিচ্ছেন না কোনো? 

আপনারাই তো দেশে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে রেখেছেন যেখানে বিদ্যাকে তোতা পাখির মতো মুখস্থ করানো হয়।তাহলে আপনি আপনার কোন অভিজ্ঞতায় ৫/৮ বছরের অভিজ্ঞ প্রার্থী কে খোঁজেন? লজ্জা করে না আপনাদের এরকম অযোগ্য চিন্তা ভাবনা ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে? 

আপনারা তো আপনাদের সন্তানদের  বিদেশে পাঠিয়ে লেখা পড়া করাচ্ছেন অথবা যারা দেশে আমাদের সাথে পড়ছে তাদেরকে তো ঠিকই যোগ্যতা ছাড়াই আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঠিকই বলতেছেন যে কাজে জয়েন হও।অল্প দিনের মধ্যে ঠিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঠিকই বুঝতে পারেন আর জনসাধারণের ক্ষেত্রে আপনারা ঐ বুঝগুলো কোথায় হারিয়ে ফেলেন? 
পারবেন জনসাধারণের এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে?

তাহলে করনীয় কি?
করনীয় হলো অনার্স মাস্টার্স চলাকালীন বিডিজবসের ভালো একটি প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে হবে। লিংকড-ইনে প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে হবে। অনলাইনে জব মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারনা নিতে হবে। অনার্স পরীক্ষার সাথে সাথে ভালো কোন জবে ঢোকার চেস্টা করতে হবে।
অনেক প্রতিষ্ঠান আছে অনার্স পড়ুয়াদের জবের সুযোগ দিয়ে থাকে। সেইসব প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেলে জয়েন দিতে হবে। নিজের কাছে পূর্নাঙ্গ সিভি সবসময় পিডিএফ আকারে স্মার্টফোনে রাখতে হবে।

অনেক অনার্স মাস্টার্স পাশকরা যুবক-যুবতী আছে যারা নিজেদের স্মার্টফোনই ঠিকঠাকমতো চালাতে পারেনা। ফেসবুকে পাসওয়ার্ড কিভাবে পরিবর্তন করতে হয়,ইমেইল কিভাবে পরিবর্তন করতে হয় সেটিই জানেনা।
নিজস্ব কোন ইমেইল এড্রেস নেই। আপনার ফোনে বেসিক ইমেইল এড্রেস কোনটি সেটিই তারা জানেনা। সিভিতে ইমেইল এড্রেস দেয়ার সময় তারা নতুনকরে ইমেইল এড্রেস ক্রিয়েট করে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট হতে হবে। নতুবা মামাকাকা ব্যাতিত ছোটখাটো জব ম্যানেজ করাও কষ্টদায়ক হয়ে যাবে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন