ব্যাংকে চাকরির নেগেটিভ দিক কি?

কোন সন্দেহ নেই অন্যান্য অনেক পেশার চেয়ে Bank Job নানা কারণে চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে আকর্ষনীয়। স্ফীত বেতন,শুরু থেকেই সম্মানজনক পদমর্যাদা, চমৎকার কর্ম পরিবেশ, সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সরাসরি সংযোগ, ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আর বাড়তি হিসাবে সকাল সন্ধ্যা টাকার সংগে বসবাস অন্যতম। ব্যাংকের সংখ্যা বাডছে তাই বাড়তি জনবলের প্রয়োজনও বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন। আজকের দিনের তরুণ পেশাজীবীদের কাছে Bank Job ক্রমেই পরিণত হয়েছে আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং একটি পেশায়।

তবে এখন Banking যে পরিমাণ অবশ্য পালনীয় প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে তা এই পেশাটাকে পালকহীন ময়ুরে পরিণত করেছে। আর একেকজন ব্যাংকারকে করেছে মানবীয় অনুভুতিহীন যন্ত্র প্রাণীতে। তাই যারা ব্যাংকিং জবে আসতে চান তাদের বলছি-এ পেশায় আসার আগে আরেকবার ভাবুন।আমি নিরুৎসাহিত করছিনা তবে চূডান্তভাবে বৈরী পরিস্তিতি মানসিকভাবে সামাল দিতে ব্যর্থ হলে আপনি পেশায় উন্নতি তো দূরে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।
Bank Job নেগেটিভ দিক কি
ব্যাংকে চাকরির নেগেটিভ দিক কি
একজন Banker সকাল ৯টায় ব্যাংকে ঢুকে রাত ৮টার আগে কখনই বের হতে পারেনা। দিনের আলো দেখার সৌভাগ্যে ব্যাংকারের হয় না। বিকেলের সূর্যের আলো হয়ত সপ্তাহে একদিন দেখতে পায়। কারন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও প্রায় শনিবার অর্ধবেলা অফিস করতে হয়.। কতো কঠোর পরিশ্রমে তাদের দিন কেটে যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক সময়ে খেতে পারেনা,সময়ের  নামাজ সময়ে  পড়তে পারেনা (এমনকি ইসলামী ব্যাংকেও না), ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভাবতে পারেনা, কোনো জরুরি কাজে বের হতে পারেনা। সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। দিনের পুরো সময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয় তাদের। ৩৫ বছর বয়সেই একজন ব্যাংকার হয়ে উঠেন হাইপ্রেসারের রোগি, রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমান অনেক বেশি. ডাক্তার সকাল বিকাল হাঁটতে বলেছে কিন্তু সময় পাবে কোথায়?। ডায়াবেটিসও হয়ত আক্রমন করবে দ্রুত। কারন ব্যায়াম বা শারিরীক পরিশ্রম না করার কারনে ওজন বাড়ছে দ্রুত। আমার মতো পাঁচ ছয়টি রিং হার্টে লাগানোও হতে পারে।ব্যাংকারদের দুর্দশা অসীম হলেও তা বলার লোক খুবই সীমিত।

প্রত্যেক পেশাতেই কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে, থাকে অবকাশও। ব্যাংকিং পেশায় প্রথমটা আছে শুধু, পরেরটা নেই। দেশের কোথাও নির্বাচন? তার ক’দিন আগে প্রার্থীদের জামানতের টাকা জমাদানের সুবিধার্থে ছুটির দিনেও খোলা রাখতে হবে ব্যাংক। কর বা শুল্ক কালেকশনের জন্ও তাই। ছুটির দিনে সামাজিক কোন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে বলে সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছেন, হঠাৎ আগের দিন চিঠি এসে পড়ল, করদাতাদের সুবিধার্থে আগামীকাল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। কিছুই আর করার থাকেনা তখন। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যে কাঁদবে, সে বয়স তো আর নেই। কিন্তু তার ভেতরটা যে এর থেকেও বেশি কেঁদে চলছে সে কথা তিনি কিছুতেই কাউকে বোঝাতে পারেন না। নিরুপায় আক্রোশে তিনি ফেটে পড়বেন শুধু। সেটা তার মানসিক দহন বাড়িয়ে দেয়, বাড়িয়ে দেয় মনের গহীনের যন্ত্রনা যা প্রশমন হয়না কখনো।

ব্যাংকারদের যে ছুটি, তা কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাগজে কলমের। সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকেই তার নৈমিত্তিক ছুটিটাই পুরোপুরি ভোগ করতে পারে না। আর বিশেষাধিকার ছুটি তো এক অলীক স্বপ্নের নাম। ইদানিং বাধ্যতামূলক ছুটি নামে একটা ছুটি যোগ হয়েছ বটে কিন্তু সেটা যে কি জিনিস তা অধিকাংশ ব্যাংকারই বুঝতে পারেননি। কারণ, তারা এ ছুটিটা কোনদিনই ভোগ করার সুযোগ পাননা। আমি বাহরাইনে দেখেছি ওখানে রিক্রিয়েশান লিভ পনেরো দিন কাটাতেই হয় এবং এর জন্য এলাউন্সও নগদ দেয়া হয় যাতে পরিবারসহ বাইরের কোন দেশে সে বেড়িয়ে আসতে পারে সাথে কেনা কাটাও।

অনেকেই বছরে দু’দিন ব্যাংকারদের Bank হলিডের কথা বলে থাকেন। ব্যাংকে যোগ দেবার আগে কেউ কেউ এই ছুটিটা নিয়ে উত্তেজিত বা গর্ববোধও করেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এটা আসলে আগের হলিডে থেকে এ হলিডে পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ আর গ্রাহকদের সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক চাপ কাটিয়ে নতুন করে প্রস্তুতি নেবার একটা গোজামিলের প্রক্রিয়া মাত্র। সেদিনও ব্যাংকারকে নিয়ম  মতো অফিসে এসে বিগত দিনের খতিয়ান সমন্বয় করতে হয়।

আমি বলি ঈদ হোক কি পূজা, সবই ব্যাংকারের জন্য উপহাসের উৎসব। রমজান কিংবা কোরবানীর ঈদ। গরুর বাজারে একজন ব্যাংকারের ডিউটি পড়ে জাল নোট চেক করার। অথচ, নিরীহ ব্যাংকারটি মনে মনে ভাবছিলেন ঈদের ছুটিতে যথাসময়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সে কপাল কি তার আছে? নেই। কারন, তিনি একজন ব্যাংকার। ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ঈদের আগের দিনের টিকেট কেটে রেখেছেন অনেকে। হঠাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ এল ওই দিনও জনস্বার্থে তাকে অফিস করতে হবে। কষ্টে বুক ফেটে গেলেও মুখে হাসি নিয়েই জনস্বার্থে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। তখন একজন ব্যাংকারকে টিকেট মিস, অর্থ মিস আর মিসেসের হাসি মুখটাও মিস করতে হয়। ক্ষুব্ধ মন নিয়ে চাঁদ রাতে সকল ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে গাড়িতে উঠে ৬ ঘন্টার পথ ২৬ ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে যখন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান, তখন ঈদগাহ মাঠ থেকে ফেরা আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদের বাসি কোলাকুলিটা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তার।

সপ্তাহের ৫দিন গাধার কাটুনি খাটার পর যখন প্রায়শই শুক্র-শনি বন্ধতেও অফিস করতে হয় তখন সে ব্যাংকার তার স্ত্রীর চোখে হয়ে উঠেন খারাপ স্বামী আর সন্তানের চোখে হয়ে উঠেন খারাপ পিতা। স্ত্রী-সন্তানরা আশা করেন শৃংখলিত ব্যাংকার পেশায় সপ্তাহশেষে স্বামী বা বাবার একটু কাছে থাকার, একটু বেড়াতে যাওয়ার কিংবা কোন পারিবারিক কাজে বের হওয়া। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। অনেক ব্যাংকার বাবা তার সন্তানদের সঠিক খোঁজ খবরটাও রাখতে পারেন না। ব্যাংকারদের কর্মসময় সম্পর্কে এমনও শেখানো হয় যে একজন ভালো ব্যাংকার সব সময়ই খারাপ স্বামী বা পিতা। অর্থাৎ একজন ভালো ব্যাংকারকে সব সময়ই রাত করে ঘরে ফিরতে হবে। যার ফলে, একজন ব্যাংকার তার পরিবারের কাছে হয়ে উঠেন একজন খারাপ স্বামী-পিতা। আমার একজন জুনিয়র কর্মকর্তা বাসায় এলে আমার প্রিয় স্ত্রী তার কাছে এন্তার অভিযোগ করেন।একই সমস্যা তারও জেনে মহোদয়া প্রচন্ড হতাশ ও বিরক্ত হোন।ভালো ব্যাংকার তার কাস্টমার ও ম্যানজমেন্টের কাছে সবচেয়ে প্রিয়ভাজন তবে পরিবারে তিনি সবচেয়ে অপ্রিয় মানুষই বটে।

লেট সিটিং তো আজকাল কর্ম দক্ষতা নির্দেশক। শাখা ব্যবস্থাপক কিংবা ডিপার্টমেন্ট হেডরা অধীনস্তদেরকে অফিস সময় এবং তাদের কাজ শেষ হয়ে যাবার পরও ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে তিনি অফিস ত্যাগ করার আগে কোন অফিসার ডেক্স ছাড়তে পারেন না।আরো অন্যায় যে মেয়েদেরও কোথাও কোথাও অফিস সময়ের পরও বসে থাকতে হয়! কিন্তু নির্ধারিত কর্মসময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঘরে ফেরা যে সত্যিকার দক্ষতার পরিচায়ক, এই সরল সত্যটা অতীতে কিংবা বর্তমান সময়ের মানবসম্পদ উন্নয়নের নতুন ধারণাতেও প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।

একজন ব্যাংকার আজকের সমাজ ব্যবস্থায় করুণার পাত্র। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের হাত পা ধরে অনুরোধ করা যে, ‘ভাই একটা একাউন্ট খুলেন, আমার সামনে প্রমোশন’। ব্যাংক হতে দেয়া আকাশচুম্বী ‘টার্গেট’ অর্জন করতে একজন ব্যাংকারকে উদভ্রান্তের মতো ছুটাছুটি করা লাগে। প্রতি সপ্তাহে সবাইকে নিয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিটিং করবেন যার কমন এজেন্ডা-“আপনি কয়টা একাউন্ট খুলেছেন, কতো ডিপোজিট আনছেন? আপনার বেতন কিভাবে হয় হিসাব রাখেন? প্রতি মাসে ১০টা নতুন একাউন্ট আনবেন। নতুন বিজনেজ আনবেন প্রতি সপ্তাহে। ৭টা বাজলেই আপনারা চলে যেতে যান কেন? ব্যাংকের প্রতি কি আপনাদের সহমর্মিতা নাই? যে প্রতিষ্ঠান আপনার রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, যার টাকায় আপনার পরিবার খেয়ে-পড়ে বাঁচে, তাকে আপনি বাঁচাতে চান না?

ইদানিং কয়েকটি ব্যাংকে যোগ হয়েছে সারা বছরব্যাপী ক্যাম্পেইন। এর নামও দেয়া হয়েছে ‘ক্যামপেইন ক্যালেন্ডার’।সারা বছর ধরে ব্যাংক কর্মীদের চাংগা রাখতেই নাকি এই প্রচেষ্টা।তাহলে কি তারা প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়ে ? ক্যাম্পেইনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য,সময় ও পরিবেশ লাগে। ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্ববহ ক্রাইসিস যা সাধারণত  নিয়মিত কাজের মধ্যে সম্ভব হয়না তাই বছরের কোন একটি সময়ে সেটা এড্রেস করতে এমন ক্যাম্পেইন করা হয়। সেটা ডিপোজিট সংগ্রহ বা মন্দ ঋণ আদায়ে হতে পারে কিন্ত ব্যাংকের সকল প্রমোশনাল কর্মই যদি ক্যাম্পেইনে আসে তাহলে নিয়মিত কাজের ক্ষতি হবেই। অফিসাররা কি এতে কমফোর্ট ফিল করে ? কাষ্টমাররা কি এসময়ে তাদের নিয়মিত সেবা পান ? একটু সার্ভে করে দেখুন।ক্যাম্পেইনের গুঁড় না নিন্মমুখী সেবামানের পিঁপড়া না খেয়ে ফেলে (!)

ব্যাংকারদের বহুমুখী কর্মপরিধি, ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা এবং কঠোর নিয়মাচার পরিপালনের চাপ কেবল তাঁদের সাময়িক ক্ষতিই করে না, দীর্ঘ মেয়াদে জন্ম দেয় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত, মানসিক এবং সামাজিক জটিলতাও। আমার মতে,অর্থনীতির আঁকার বিবেচনায়নে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশী। আর সবার মধ্যেই সর্বোচ্চ মুনাফা করার তীব্র লালসা বিদ্যমান। কয়েকটি দেশের অবস্থা দেখুন-

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির জিডিপির আকার ছাড়িয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দ্রুত সমৃদ্ধির পথে হাঁটা থাইল্যান্ডের অর্থনীতি বড় হলেও ব্যাংকের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে দেশটিতে সরকারি খাতের ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ছয়। আর বেসরকারি খাতে রয়েছে ১২টি ব্যাংক। সব মিলিয়ে উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিজস্ব ব্যাংকের সংখ্যা ১৮।

বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র এশিয়ার ধনী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। কিন্তু দেশটিতে স্থানীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র পাঁচ। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বহু বছর ধরে উদাহরণ হিসেবে আসছে মালয়েশিয়ার নাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র আট। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর একেবারেই বিপরীত চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে। একই ধরনের প্রডাক্ট ও সেবা নিয়ে সমগ্র দেশে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা করছে ৬২টি বাংলাদেশী ব্যাংক। 

Bank Job প্রেশারে মানসিক ও শারিরীক ব্যাধিগ্রস্থ এক ব্যাংকার তার ব্লগ স্ট্যাটাসে লিখেছে-‘আমিতো মানুষ নই। মানুষ গুলো অন্যরকম। হাটতে পারে, বসতে পারে, এ ঘর থেকে ও ঘরে যায়। মানুষ গুলো অন্যরকম। আমি মানুষ নই। মানুষ হলে আমার চোখে মান-অভিমানের রাগ থাকতো, স্নেহ-মায়া-মমতা থাকতো, পার্কে-সিনেমায় যাওয়ার মন থাকতো, অবসরে বেড়াতে যাবার মানসিকতা থাকতো। আমার মধ্যে কিছুই নেই। আমিতো মানুষ নই। আমিতো কেবল একজন ব্যাংকার।’

কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের ছাত্রদেরকে একটি রচনা লিখতে বলা হয়েছিল। রচনার বিষয়বস্তু-‘ব্যাংকার’। এক ছাত্র (যার বাবা একজন ব্যাংকার) লিখেছে-“ব্যাংকার একটি দু-পেয়ে অতি নিরীহ ভদ্র প্রাণী; যাদের দেখতে হুবহু মানুষের মতো। পার্থক্য শুধু অনুভূতির দিক থেকে। ব্যাংকারদের জগতে একটি কথা প্রচলিত আছে, গন্ডারের মতো চামড়া না হলে আদর্শ ব্যাংকার হওয়া যায় না। পৃথিবীর সব দেশেই এই প্রজাতির দেখা মেলে।”

আরেকটু শুনুন,অনলাইনে একজন ২৫ বছরের তরুণী এমন একজন স্বামীর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যার উপার্জন হতে হবে বছরে ৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। সম্পদশালী জীবনসঙ্গী খোঁজার এই অনলাইন বিজ্ঞাপন ঝড় তুলে নিউইয়র্কের নাগরিক সমাজের মৌলিক বিশ্বাসে। এটা কী জীবনসঙ্গী খোঁজা না কি কোনো ব্যবসায়িক সমঝোতা। ওই তরুণী লিখেছে, “নিউইয়র্ক সিটিতে মধ্যবিত্তরাই যেখানে বছরে এক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে সেখানে আমি খুব বেশি চেয়ে ফেলছি কী!”

এই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে একজন ব্যাংকার লিখেছেন, “এটা খুবই পাগলাটে ধরনের ব্যবসায়িক সমঝোতা। তোমার সৌন্দর্য ফুরিয়ে আসবে অথচ আমার উপার্জন দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। ব্যাংকের চাকুরী বিধায় খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার সম্পদ বাড়ার এক ধরনের নিশ্চয়তা আছে, কিন্তু তুমি তো আর ক্রমশ সুন্দর হয়ে উঠবে না।” ব্যাংকার আরো হিসেবী ভঙ্গিতে লিখেছেন, “অর্থনৈতিক সূত্র অনুযায়ী তুমি খরচশীল সম্পদ(Depriciative Asset) আর আমি উপার্জনশীল সম্পদ (Appeciative Asset)। তুমি এখন ২৫, আসছে ৫ বছর তুমি সুন্দর থাকবে। কিন্তু তারপর তোমার সৌন্দর্য দ্রুত হ্রাস পাবে। ৩৫ এ ভাবতে পারছো সেই অবস্থাটা কোথায় দাড়াবে? ভালো ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি তোমাকে কিনতে পারি না। সুতরাং ‘লিজ’ নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত হবে।

জবাবে তরুণী লিখেছে-“তুমি ব্যাংকে চাকুরী কর, ভালো বেতন পাও, দিনকে দিন তোমার উপার্জন বাড়বে এটা সত্যি। একবার তুমি ভেবে দেখতো-ব্যাংকিং জবের প্রেশারে দিনকে দিন তুমি অনিদ্রা, খাবারে অরুচি, হাই ব্লাড প্রেশার, কিডনী ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি সমস্যায় আক্রান্ত হবে। এমনকি আমার প্রতি তোমার আসক্তিও  কমে যাবে। সেটা কি আমার জন্য কষ্টদায়ক নয়? সে কষ্টটা হয়তো তোমার উপার্জনের কারনে আমি মানিয়ে নিতে পারবো। কোথাওতো একটা স্বান্তনা খুজতে হবে আমাকে।”

তবু ব্যাংকাররা ভালো থাকুন,আনন্দে থাকুন এবং যেটুকু সময় পরিবার ও সন্তানদের সাথে থাকবেন অবসাদ ও বিষন্নতামুক্ত থাকুন।অন্য বহুজনের চেয়েও আপনি ভালো আছেন,এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং সকল ধরনের সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে তিনি যেন আপনাকে নিরাপদ ও আনন্দিত রাখেন-সে দোয়াই করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন