বাংলাদেশের ৯০% চাকুরীতে কোনো শিক্ষার্থীই নিজের পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড অনুসারে জব করেনা। কারণ আমাদের দেশে যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে(স্পেশালাইজড কিছু জব ছাড়া) যেকোনো চাকুরীতেই জব করতে পারবেন এর মূল উদাহরণঃ সরকারী এবং ব্যাংক জব । এখন আপনারা(বিজন্যাস গ্রাজুয়েটরা) যদি এটা ভেবে বসে থাকেন যে আপনি যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন সে ব্যাকগ্রাউন্ডে জব করবেন; সো এসব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে Plan B,C নিয়ে চিন্তা করেন!!
ধরেন আপনি ফিন্যান্স নিয়ে প্রফেশনাল বিবিএ করছেন আশায় আছেন ব্যাংক অথবা সরকারি চাকুরী তে জব করবেন গ্রাজুয়েশনের পর। গ্রাজুয়েশন শেষ করে ৬ মাস থেকে একবছর জুতার তলা ক্ষয় করে,মামা চাচার তদবীরে ও যদি কিছু নাহয় তখন হতাশ হয়ে পড়বেন তখন বাধ্য হয়ে ডিফারেন্ট ট্রেকে ছুটতে হবে!
আমাদের দেশের বিজন্যাসের ছেলেমেয়েরা ফ্যাক্টরি, গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি নাম শুনলে নাক সিটকায় মনে করে ওইখানে দিনমজুর রাই জব করে উনারা স্বপ্ন দেখে এসির রুমে কর্পোরেট জবের!! অথচ আমরা কয়দিন পরপর হায় হায় করি পত্র পত্রিকায় যখন লিখে ভারতীয়রা, শ্রীলঙ্কান, চাইনিজ, বিদেশীরা আমাদের দেশের সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে....কিন্তু একবারো ভাবিনা তারা কিন্তু আমাদের দেশের গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি, ইন্ডাস্ট্রি গুলো থেকেই কিন্তু প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে বেতন বাবদ !! আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এর বিজন্যাস গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের দেখবেন এইসব সেক্টরে ন্যূনতম বেতন নিয়ে গ্রাজুশনের পর ঢুকে ৭-৯ বছর পর সেই প্রতিষ্ঠানের বস হয়ে গাড়ি হাকিয়ে চলছে ৬ ডিজিটের বেতন নিচ্ছে আর ফ্যাসিলিটি ও কোম্পানি থেকে সেই পরিমান নিচ্ছে!! কিন্তু তাদের দেখবেন বিসিএস নিয়ে এত মাতামাতি নাই।
বাংলাদেশে Subject অনুযায়ী Job না পাওয়া কারন কি |
আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাবি আমরা শুধু সারাজীবন সরকারি ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির জব নিয়েই পড়ে থাকবো পরে বয়স শেষ হওয়ার পর/বয়স ৩০ছুই ছুই এই সময় গিয়ে ঠেকায় পরে ডিফারেন্ট ট্রেকে জব খুজি! তখন আমাদের নিজস্ব কোন লক্ষ্যঠিক করিনা যে আমি আগামী ৩-৫ বছরে ডিপার্টমেন্ট হেড হবো কারন ডিফারেন্ট ট্রেকে আসার জন্য আমাদের কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিলোনা।
এখন কথা হলো ডিফারেন্ট ট্রেকে যদি জব করতে হয় সেক্ষেত্রে আমি Plan A, B,C কিভাবে করবো?
এক্ষেত্রে আমি নিজের উদাহরণ টা দেই সহজ ভাবে বোঝার জন্য.... আমি প্রফেশনাল বিবিএ করেছি NU থেকে ফাইন্যান্সে কিন্তু জব মার্কেটের যে হাল দেখলাম যে ফাইন্যান্স বা একাউন্টিং ব্যাকগ্রাউন্ডে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে হলে অন্তত CA(CC) কম্পলিট করে জব সেক্টরে আসতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম EMBA Chittagong University থেকে করি কারণ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সাব্জেক্ট চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য এবং খুবই দামী একটা সাব্জেক্ট।
এর পাশাপাশি BGMEA থেকে Garments Quality system নিয়ে কোর্স করি এবং ডিপ্লোমা করি Quality engineering and productivity এর উপর কারণ আমার MBA তে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে Quality management এর 03 ক্রেডিটের একটা সাব্জেক্ট ছিলো। এর পাশাপাশি আমার ইচ্ছা ছিলো IELTS করি/CU থেকে IML(Institute Of Modern language) করি যাতে বাইরের দেশে অথবা নিজের দেশের জবে ভালো অবস্থানে যেতে পারি হয়তো কোন কারণে এমবিএ পড়া অবস্থায় সুযোগ না হলেও আমার একটা সুযোগ আসে CU + British council এর যৌথভাবে Comprehensive English course করাবে যার ক্লাস নিবেন বাংলাদেশের সাবেক ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক বারথলোমেয়ো আমি ছিলাম Programme coordinator + কোর্সসহ সনদ ও পেয়েছি(মজার ব্যাপার হচ্ছে ৮১ জনের মধ্যে যাদের সনদ দিবে তাদের ২২ জনের শর্টলিস্ট টা আমাকে কান্ট্রি ডিরেক্টর করতে দিয়েছিলেন আমি আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে সনদ নিয়ে দিতে পেরেছি যারা ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করেছিলো)।
যাইহোক এখন আসি মূল আলোচনায়।আমি ফিন্যান্সে পড়লাম অপারেশন এন্ড সাপ্লাই চেইনে পড়লাম গার্মেন্টস কোয়ালিটি নিয়ে পড়লাম কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়লাম। কারণ আমি প্ল্যান করেছিলাম যদি ব্যাংকে জব করি সেক্ষেত্রে আমি অনার্সের(ফিন্যান্স) রেজাল্ট দিয়ে এপ্লাই করবো। এরপর BIBM থেকে MBM করবো এরপর CDCS করবো যাতে বাইরের দেশের ব্যাংকে জব করতে গেলে CDCS দিয়ে এপ্লাই করতে পারি।
সাপ্লাই চেইন নিয়ে করে করেছি কারণ বাংলাদেশে এই সাব্জেক্ট টা খুবই রেয়ার পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আছে আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যা আছে সব হচ্ছে নামকা ওয়াস্তে ডিগ্রি। এছাড়া সাপ্লাই চেইনের স্টুডেন্ট কম এবং নামকরা কোম্পনি গুলো সাপ্লাই চেইন ডিপার্টমেন্ট খুলেছে এছাড়া বাইরের দেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে সাপ্লাই চেইনে জব করার জন্য IELTS এ ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু করোনার কারণে যাওয়া হয়নি। এখন ২ বছর জবের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে যাবো ভাবছি।
যেহেতু এখন জবে আছি ট্রেনিং এর পর যদি কমার্শিয়াল/ERP/Quality ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার হই সেক্ষেত্রে আমি Supply chain management এর গ্লোবাল ডিগ্রি ISCEA™ থেকে CSCM/CSCA নিবো ভাবছি এছাড়া Lean Manufacturing ও Six Sigma এর উপরও (যেহেতু এইগুলো সাপ্লাই চেইনের সাব্জেক্ট)। এতে করে আমি যেকোনো দেশেই জব করতে পারবো।
গার্মেন্টস কোয়ালিটিতে পড়লাম কারণ এই সেক্টরে কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টে খুব দ্রুত শাইন করা যায় পাশাপাশি Quality engineering and productivity এর উপর ডিপ্লোমা যা কিনা আমাকে বিদেশি বায়ারের সাথে বায়িং হাউজ/3rd পারত্য বিদেশি বায়ারের সাথে Quality Department (DQA) তে কাজ করে যদি ২ বছরের মধ্যে হেড অফ পজিশনে যেতে না পারি সেটা এপারেল সেক্টর হোক/ 3rd party Buyer এর সাথে হোক /বায়িং হাউজে হোক সেক্ষেত্রে আমি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশে এপারেল সেক্টরে ট্রাই করবো( বাংলাদেশে এপারেল সেক্টরে জব করে কয়েকবছর বছর বিভিন্ন দেশে হেড হান্টিং করে চলে যেতে পারবেন)। আর যদি Industrial Engineering Department এ ট্রেনিং এর পর পারফরম্যান্স অনুসারে ট্রান্সফার হই তাহলে সেই অনুযায়ী IE এর উপর ডিপ্লোমা + আমেরিকা থেকে IE এর উপর একটা ডিগ্রি নিবো জবের পাশাপাশি ডিপার্টমেন্ট হেড হওয়ার জন্য বা বাইরের দেশে গিয়ে জব করার জন্য ।
এছাড়া IELTS করলেতো যেকোনো দেশে জব, পড়াশোনা, আন্তর্জাতিক কোম্পানি NGO গুলো দেশে আছে এবং দেশের বাইরে সেগুলো তে এপ্লাই করতে পারছি। ব্যাস এই হলো আমার ডিফারেন্ট ট্রেকে যাওয়ার প্ল্যান এবং সেই অনুযায়ী সাকসেস হওয়ার স্টোরী(এখনো কিছু পথ বাকি)। আল্লাহর রহমতে আমি সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
সো ভাই বসে থাকিয়েন না চেস্টা করেন Plan A,Plan, Plan C করার।
বিঃদ্রঃ আমি আমার বিবিএ এমবিএ বাদে যত কোর্স,ডিপ্লোমা, ট্রেনিং করেছি সব টিউশনের টাকায়। সো আপনারা ও চাইলে ভবিষ্যতের জন্য এভাবেই ট্রাই করতে পারেন। ট্রেনিং করতে পারছেন না কোর্স করতে পারছেন না অন্তত বই পড়েন নিয়াজ আহমেদ, আপেল মাহমুদ, রাজিব আহমেদ সহ অনেক ভালো ভালো বক্তার লেখা বই আছে ক্যারিয়ার সংক্রান্ত,সেলস এবং মার্কেটিং,সিভি রাইটিং, এক্সেল, প্রেজেন্টেশন, পাবলিক স্পিকিং, লিডারশীপ,ইংলিশ স্পোকেন,নেটওয়ার্কিং এর উপর বইগুলো পড়েন খরচ তেমন না ১০০-৩০০ টাকা।
অনেকে বলবেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে কোর্স/ট্রেনিং করলেতো রেজাল্ট খারাপ হবে!! এসব আপনার ভূল ধারণা আপনার যদি প্যাশন থাকে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই পারবেন, টাকা পয়সা/সময়/রেজাল্ট তখন দেখবেন এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা(ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়)।
ধরেন আপনার সিজিপিএ ৩.০৫ কিন্তু আপনার জব রিলেটেড ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং /ডিপ্লোমা /কোর্স করা আছে সেক্ষেত্রে একজন সিজিপিএ ৩.৬০ পাওয়া (কোনো কোর্স/ট্রেনিং/ডিপ্লোমা না করা স্টুডেন্ট থেকে এগিয়ে থাকবেন)। তবে ভাই উলটা পালটা প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করিয়েন না যেগুলো সিভিতে লিখতেও পারবেন/লিখেও ফায়দা নাই যেমন ধরেনঃ সাইফুরস/FM Method থেকে ইংলিশ কোর্স করেছেন যেটা কিনা আন্তর্জাতিক ভাবে/দেশীয় মালিকপক্ষ/রিক্রুটার দের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য না তারচেয়ে বরং DU,CU,RU থেকে IML অথবা ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে IELTS করেন সেটাই গ্রহনযোগ্য!!
Tags
Career QnA